বিভিন্ন রোগে তুলসী পাতার ব্যবহার ও তুলসী পাতার গুণাগুণ :-
![]() |
তুলসী পাতা |
তুলসী গাছ প্রধানত চার প্রকার। রাম তুলসী, সাদা তুলসী, কালচা তুলসী, বাবুই তুলসী। সচারচর আমরা সাদা তুলসী দেখতে পাই। আর বাবুই তুলসী রোগ নিরাময়ে বেশি ব্যবহার হয়।
দৈনন্দিন জীবনে তুলসী বহুল ব্যবহৃত হওয়ায় যেমন স্নানের জলে তুলসী রেখে স্নান করলে চর্ম রোগের সম্ভাবনা কম থাকে। আবার অন্যথায় খাদ্যবস্তু তে তুলসীপাতা রেখে দূষণের হাত থেকে বাঁচা যায়। পোকা দাঁতে তুলসীপাতা গুঁজে রাখলে দাঁতের যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। তুলসীর রস গায়ে মাখলে ত্বক উজ্জ্বল হয়, কাম শক্তির ক্ষেত্রে এর অবদান অপরিহার্য। কার্তিক মাসে প্রতিদিন 4-5 টা তুলসী পাতা খালি পেটে খেলে সারাবছর রোগের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
তুলসী পাতা চকচকে এবং ডিম্বাকৃতি আকারের, মসৃণ বা সামান্য দাঁতযুক্ত প্রান্তযুক্ত যা সাধারণত কিছুটা কাপ দেয়; পাতাটি বর্গাকার কান্ডের সাথে বিপরীতে সাজানো থাকে। ছোট ফুলগুলি টার্মিনাল ক্লাস্টারে বহন করা হয় এবং সাদা থেকে ম্যাজেন্টা পর্যন্ত রঙ ধারণ করে। উদ্ভিদটি অত্যন্ত হিম-সংবেদনশীল এবং উষ্ণ জলবায়ুতে সবচেয়ে ভাল জন্মায়। তুলসী ফুসারিয়াম উইল্ট, ব্লাইট এবং ডাইনি মিলডিউতে সংবেদনশীল, বিশেষত যখন আর্দ্র অবস্থায় বেড়ে ওঠে।
আয়ুর্বেদিক মতে তুলসীপাতা বিভিন্ন ব্যাধি ভালো করে। হার্টের অসুখ ইসকিমিয়ার চিকিৎসায় তুলসীপাতা ভালো কাজ দেয়। তুলসী পাতা চিবিয়ে খাওয়া যায়। বনৌষধির মধ্যে তুলসী সর্বোৎকৃষ্ট বলে শিকার করা হয়েছে। মেটেরিয়া মেডিকাতে এই গাছকে সর্বোচ্চ স্থান দেওয়া হয়েছে।
দৈনন্দিন জীবনে তুলসীর প্রয়োগ =
১) চক্ষু ওঠায় ~ তুলসী পাতার রস কাজলের মত চোখে দিলে চোখ ওঠা, চোখ দিয়ে জল পড়া বন্ধ হয়।
২) অধিক রজঃ স্রাবে ~ এরূপ ক্ষেত্রে যদি তুলসী গাছের মূল চূর্ণ করে সাদা বা মিঠে পানের সঙ্গে তার আধ চামচ মিশিয়ে মাসখানেক খেলে রজঃস্রাব স্বাভাবিক হয়।
৩) কুষ্ঠ রোগে / গলিত কুষ্ঠ হলে ~ যদি শ্বেতকুষ্ঠ হয় তবে তুলসী পাতার পাঁচটি পাতা সকালে, দুপুরে, ও সন্ধ্যায় চিবিয়ে খেলে এবং তুলসী গাছের মূলের মাটির সঙ্গে তুলসী পাতা ঘসে কুষ্ঠের ক্ষততে প্রলেপ দিলে কুষ্ঠের দাগ মিলিয়ে যাবে।
৪) আধকপালীতে ~ তুলসী গাছের কচি মঞ্জুরী ছায়াতে শুকিয়ে তা গুঁড়ো করে পাঁচ গ্রাম মাত্রায় নিয়ে আধ চামচ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে বেটে। খান এতে আধ কপালী সারে।
৫) কোষ্ঠকাঠিন্যে ~ 25 গ্রাম তুলসী পাতার সঙ্গে 50 গ্রাম গোলাপী ফিটকিরি চূর্ণ করে মিশিয়ে মটর দানার মতো বড়ি তৈরি করুন। সকাল ও সন্ধ্যায় এক মাস খেতে হবে।
৬) গর্ভ নিয়ন্ত্রণে / গর্ব রক্ষায় ~ মাসিকের সময় শেষ হলে তুলসীর পাতা সেদ্ধ করে সেই জল খেলে গর্ভসঞ্চার নিবারিত হয়। যদি গর্ভাশয়ের গোলযোগে গর্ভপাত হয় তবে 30 গ্রাম তুলসী গাছের বীজ বেটে কাপড়ে ছেঁকে নিয়ে মাসিক হওয়ার 7 দিন পর থেকে সকালে, সন্ধ্যায় ও রাতে খান। গর্ভরক্ষা হবে।
৭) দাঁতের বেদনায় ~ তুলসী পাতার সঙ্গে গোলমরিচ মিশিয়ে বেটে তার বড়ি তৈরি করে তা দাঁতের যন্ত্রণা জায়গায় চেপে বসিয়ে দিলে দাঁতের যন্ত্রণা কমবে।
৮) দীর্ঘস্থায়ী যৌবন রক্ষায় ~ 25 গ্রাম করে অশ্বগন্ধা, বিপুলের মূল, তোপচিনি, তালমা খানা, নাগ কেশর ও 125 গ্রাম তুলসী পাতা একসঙ্গে বেটে তাতে 300 গ্রাম মধু, 750 গ্রাম চিনি দিয়ে চাটনি তৈরি করুন। তা ঠান্ডা হলে তাতে ছোট এলাচ, জয়িত্রী, কেসর, প্রভৃতির 15 গ্রাম মিশিয়ে বেটে ঐ চাটনির সঙ্গে মিশিয়ে শীতকালে রোজ 15 গ্রাম করে সকালে চেটে খেয়ে এক গ্লাস গরম দুধ পান করুন। তাতে যৌবন দীর্ঘস্থায়ী হবে।
![]() |
বিভিন্ন রোগে তুলসী পাতার ব্যবহার ও তুলসী পাতার গুণাগুণ |
৯) জন্ডিসে ~ শরীরে রক্ত হ্রাস পেলে এই রোগ হয়। এই রোগে সমস্ত শরীর হলুদ বর্ণ হয়ে যায়। এই রোগের সর্বশ্রেষ্ঠ ওষুধ হল 100 গ্রাম মূলোর রসের সঙ্গে 25 গ্রাম তুলসী পাতার রস ও 25 গ্রাম ইক্ষু গুড় একসাথে মিশিয়ে রোজ সকালে, দুপুরে ও সন্ধ্যায় মাস খানেক খেলে রক্তশূন্যতা দূর হয়। পাঁচগ্রাম তুলসী পাতা, 5 পুনর্নবার মূল, পাঁচ গ্রাম জল দিয়ে বেটে খেলে জন্ডিস রোগের যে হলুদবর্ণ হয় তা কেটে যায়। রোগীর রোগ সেরে যায়।
১০) পাথুরিতে ~ জলের মধ্যে তুলসীর মঞ্জুরীর জ্বাল দিয়ে ঘন করে ক্বাথ তৈরি করে রোগীর নিম্নাঙ্গে চেপে ধরুন। কিছুক্ষণ করার পরে পাথুরি গলে বেরিয়ে যাবে।
১১) স্তন্যদুগ্ধ বৃদ্ধিতে ~ তুলসী পাতার রস, অশ্বগন্ধা রস ও মাকাই পাতার রস 15 মিলি লিটারের সঙ্গে দুই চামচ মধু মিশিয়ে এক সপ্তাহ সেবনে প্রসূতির স্তনে দুধ বৃদ্ধি পাবে।
১২) টাক পড়ায় ~ তুলসী পাতা ও পিপুলের কলি একসঙ্গে বেটে তা টাকে লাগালে টাক পড়া ভালো হয়।
১৩) মুখের দুর্গন্ধে ~ খাবার পর দু-চারটি তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে, মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে। দাঁতে পোকা লাগবে না, চোয়ালের দোষ কেটে যাবে।
১৪) বিদ্যুতের শক লাগলে ~ মাথায় ও মেরুদণ্ডে তুলসী পাতার রস মাখলে জ্ঞান ফিরে আসবে। সাথে সাথে হাতে পায়ের তলায় ও হাতের তালুতে মাখাতে হবে।
১৫) চুল উঠে গেলে ~ কুড়ি পঁচিশ টা তুলসীপাতার সঙ্গে 15 গ্রাম আমলকির গুঁড়ো মিশিয়ে জলে ভিজিয়ে রাখুন। পনেরো-কুড়ি মিনিট পর সেই জল দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। তারপর মাথা শুকনো হয়ে গেলে মাথায় নারকেল তেল মাখুন। এতে চুল কালো হবে এবং চুলের গোড়া শক্ত হয়ে চুল ওঠা বন্ধ হবে।
১৬) রক্তস্রাবে ~ দশ গ্রাম তুলসী গাছের মূল চূর্ণ পানের সঙ্গে খাইয়ে দিলে রক্তস্রাব বন্ধ হবে।
১৭) রাতকানা রোগে ~ দু ঘন্টা অন্তর অন্তর তুলসীপাতার রস খান এবং দু ফোঁটা করে সকাল ও সন্ধ্যায় তা চোখে দিন। এইভাবে অন্তত একমাস চোখে দিলে ও খেলে রাতকানা রোগ সেরে যায়।
১৮) কানে কম শোনায় ~ যদি কানে কম শোনেন তবে তুলসীর রস অল্প গরম করে কানের মধ্যে সকালে ও সন্ধ্যায় কয়েক ফোঁটা করে দিলে শ্রবণ শক্তি ফিরে আসে।
![]() |
বিভিন্ন রোগে তুলসী পাতার ব্যবহার ও তুলসী পাতার গুণাগুণ |
১৯) বীর্যস্রাবে / স্বপ্নদোষে / শীঘ্রপতন ~ নপুংশকতার পূর্ব লক্ষণ হল বীর্য তারল্য। এই বীর্য কারো ও স্বচ্ছ হওয়ার জন্য 100 গ্রাম তুলসীর বীজ ও সমপরিমাণ মিছরি মিশিয়ে পেস্ট করে তার পাঁচ গ্রাম করে গরুর দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে বীর্য গাঢ় হয়। অন্তত এক মাস খেতে হবে। তুলসীর মূল বেটে খেলে স্বপ্নদোষ যাবে আর মূলের দুগ্ধপানের মধ্যে দিয়ে চিবিয়ে খেলে শীঘ্রপতন বন্ধ হবে।
২০) স্নান করার আগে তুলসীর কিছু পাতা জলে দিয়ে কিছুক্ষণ বাদে সেই জল দিয়ে স্নান করলে কোন প্রকার চর্মরোগ হয় না।
২১) তুলসী গাছ আধ্যাত্মিক শক্তির প্রতীক বলে মানা হয়। তুলসী তলায় প্রদীপ জ্বালালে এবং তুলসী গাছ কে প্রদক্ষিণ করলে অপূর্ব মানসিক শান্তি পাওয়া যায়।
বন্ধুরা আপনাদের কেমন লাগলো এই পোস্টটি। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে লাইক করে শেয়ার করুন আপনার পরিবারের সাথে। অথবা যদি কোনো ত্রটি থেকে থাকে, তাহলে আপনি বলতে পারেন কমেন্ট এর মাধ্যমে ধন্যবাদ। এইরকম আরও সুন্দর সুন্দর পোস্ট পেতে অবশ্যই এই পেজটাকে ফলো করুন।
বিভিন্ন রোগে তুলসী পাতার ব্যবহার ও তুলসী পাতার গুণাগুণ।
Thanks
উত্তর দিনমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন